Why the sky show dark in night.

রাতের আকাশ অন্ধকার দেখায় কেন? এই প্রশ্নটি শুনলে প্রথমেই যে উত্তরটি মাথায় আসে তা হলো রাতের আকাশে সূর্য নেই সেজন্য রাতের আকাশ অন্ধকার দেখায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সূর্য একটি নক্ষত্র এবং রাতের আকাশেও প্রচুর নক্ষত্র রয়েছে। গ্যালাক্সি যদি সুষমভাবে তারাপূর্ণ হয় তাহলে যেদিকেই তাকাই না কেন আমাদের দৃষ্টি কোন না কোন নক্ষত্রের পৃষ্ঠে গিয়ে পৌঁছানোর কথা আর সেক্ষেত্রে রাতের আকাশ অন্ধকার হওয়ার কথা নয় বরং দিনের মতই উজ্জ্বল হওয়ার কথা। তাহলে চলুন আকাশের দিকে তাকাই, আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করি!
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের আগ পর্যন্ত ভাবা হতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্ব অপরিহার্যভাবে ধ্রুব থাকে। সম্ভবত মহাবিশ্ব অসীম সময় ধরে অস্তিত্বশীল। কিন্তু এই ভাবনা আমাদের কিছু উদ্ভট সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যায়। নক্ষত্রগুলো যদি অসীম সময় ধরে বিকিরিত হতো, তাহলে তারা পুরো মহাবিশ্বকেও তাদের মতো তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে তুলতো। এমনকি রাতের বেলায়ও পুরো আকাশ সূর্যের মত উজ্জ্বল দেখাতো। কারণ আমাদের দৃষ্টির প্রতিটি রেখা শেষ হতো কোন না কোন নক্ষত্রের কিংবা ধুলোর মেঘে। আর এই ধুলোর মেঘগুলো নক্ষত্রদের মতো তাপমাত্রায় না পৌছানো পর্যন্ত উত্তপ্ত হতেই থাকতো।
আমরা যে রাতের আকাশ অন্ধকার দেখি এই পর্যবেক্ষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কত কি ধারণা করা যায় এই রাতের অন্ধকার আকাশ থেকে চলুন দেখে আসি। রাতের অন্ধকার আকাশ ইঙ্গিত করে বর্তমানে যে মহাবিশ্ব দেখা যায়, সেরকম কোন মহাবিশ্ব একই অবস্থায় চিরকাল থাকতে পারে না। অতীতে নিশ্চয় এমন কোন ঘটনা ঘটেছিল, যার কারণে নক্ষত্রের আলো একটি সসীম সময় আগে জ্বলে ওঠা সম্ভব হয়েছে। নক্ষত্রগুলো যদি একই জায়গায় চিরকাল স্থির থাকতো, তাহলে তারা কেন হঠাৎ করে কয়েক বিলিয়ন বছর আগে আলোকিত হয়ে উঠেছিল? কোন সেই বিশেষ ঘড়ি, যা তাদের ঠিক ওই সময়ে জ্বলে উঠতে বলেছিল? তাহলে আমরা ধারণা করতে পারছি যে নক্ষত্রগুলো বিগব্যাং এর সময় সৃষ্টি হয়ে একই জায়গায় অবস্থান করে অসীম সময় পর্যন্ত আলো ছড়াতে পারেনি। যদি পারতো তাহলে রাতের আকাশও আমরা উজ্জ্বল দেখতাম। তাহলে ঠিক কোন কারণে আমরা এমনটা দেখছি? আমাদের হাতে প্রমাণই বা কোথায়?
প্রায় বর্তমান অবস্থার মত করেই মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে এই ধারণাতে বিশ্বাস করতো সেকালের বেশিরভাগ মানুষ। এই ধারণার সঙ্গে মতপার্থক্য শুরু হয় গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে। সে সময় ভেষ্টো স্লিফার ও এডউইন হাবলের কিছু পর্যবেক্ষণকের কারণে এই মতপার্থক্য শুরু হয়। ১৯২৩ সালে হাবল আবিস্কার করেন, রাতের আকাশে নেবুলা বা নীহারিকা নামের যে অসংখ্য অস্পষ্ট ছোপ ছোপ আলো দেখা যায়, সেগুলো আসলে ভিন্ন ভিন্ন ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। অর্থাৎ সেগুলো আমাদের সূর্যের মতোই অসংখ্য নক্ষত্রের ঝাঁক, যারা আমাদের থেকে বহু বহু দূরে অবস্থিত। তাদের ছোট এবং অস্পষ্ট দেখার কারণ হলো সেগুলো অনেক দূরে। তাই সেখান থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে কয়েক মিলিয়ন বছর, এমনকি কয়েক বিলিয়ন বছরও লেগে যায়। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে মহাবিশ্বের সূচনা কখনো মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে হতে পারে না।
তবে হাবলের আবিস্কৃত দ্বিতীয় বিষয়টি আরো অসাধারণ। অন্য গ্যালাক্সিগুলো থেকে আসা আলো বিশ্লেষণ করে গ্যালাক্সিগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নাকি আমাদের কাছে সরে আসছে তা পরিমাপ করা যায়। এই পদ্ধতিতে হাবল অবাক হয়ে দেখলেন প্রায় অধিকাংশ গ্যালাক্সিই আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, যে গ্যালাক্সি আমাদের কাছ থেকে যত দূরে, সেটি তত বেশি দ্রুতবেগে সরে যাচ্ছে। এই আবিষ্কারের নাটকীয় নিহিতার্থ বুঝতে পেরেছিলেন হাবল। তিনি বুঝেছিলেন বৃহৎ পরিসরে প্রতিটি গ্যালাক্সি অন্য সব গ্যালাক্সি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
মহাবিশ্ব যে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব। সত্যি বলতে এটি অসাধারণ একটি ঘটনা ছিল। মহাবিশ্বের জন্মবিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রও বদলে দেয় এই আবিষ্কার। গ্যালাক্সিগুলো যদি এভাবেই পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবে অতীতের কোন একটা সময় তারা অবশ্যই একসাথে ছিল। মহাবিশ্বের বর্তমান প্রসারণ হার থেকে হিসাব করে বের করা যায় ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন বছর আগে গ্যালাক্সিগুলো সত্যি সত্যিই পরস্পরের খুব কাছে ছিল। এখানেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যে রাতের আকাশ অন্ধকার কেন! এই বিলিয়ন বছর পূর্বের বিগ ব্যাং থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আলো যতদুর পৌঁছেছে আমরা কেবল ততটুকুই দেখতে পারি। আর কোন নক্ষত্রই মহাবিস্ফোরণের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই ১০ বা ১৫ বিলিয়ন বছর সময় আলো ছড়াতে পারেনি। তাই দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আলো এখন আমাদের নিকটে পৌঁছে নি।
আলোর বর্ণালি-বিক্ষণের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন মেঘের উপস্থিতি প্রমাণ করেছেন। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রসারন ঘটছে সেহেতু দূরবর্তী ছায়াপথের নক্ষত্র থেকে আসা আলোদের লোহিত সরন বেশি তথা তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি তাই এদের শক্তি কমতে থাকে। এজন্যই এই আলোগুলি সহজেই হাইড্রোজেন গ্যাসের মাধ্যমে শোষিত হয়ে যাবে। এসব গ্যাস আমাদের আকাশগঙ্গাসহ প্রায় সব গ্যালাক্সিগুলোতে ছড়িয়ে আছে। যার অনেক দূরের কোন নক্ষত্র থেকে আসা আলো অধিক লোহিত সরনের কারণে শক্তি হারিয়ে হাইড্রোজেন মেঘ দ্বারা শোষিত হওয়ার কারণে আলো আমাদের নিকট এসে পুরোপুরি পৌঁছে না। আর তার চেয়েও দূরের গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র থেকে বের হওয়া আলো এখনো অনেক অনেক দূরে আছে। ঠিক যতগুলো উৎস থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌছায় ততোগুলোই আমরা দেখতে পাই। আর এজন্যই রাতের আকাশ অসংখ্য নক্ষত্র থাকার সত্যেও আমরা রাতের আকাশকে অন্ধকার দেখি!

Comments

Popular Posts