সূর্যের আলো তখন কমলা হয়ে গেছে। চারিদিকে পাখিদের কলতানে বোঝা যাচ্ছে আবার একটা সন্ধ্যা নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। পথচলতি মানুষজনের ঘরে ফেরার তাড়া যেন একটু বেশিই। এই সময় কাস্পিয়ান সাগরের বুকে একটি নৌকা জলে নামল। আরোহী একজন যুবক ও তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। লক্ষ্য নৌকায় পাড়ি দেওয়া জার্মানির উদ্দেশ্যে। যারা ইউরোপের ভূগোল জানেন তারা বুঝতে পারবেন কতটা বিপদসংকুল হতে পারত তাদের এই যাত্রা। তবুও দুজনেই নাছোড়বান্দা। বিশেষত ওই যুবক। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যেই খারাপ আবহাওয়া দেখা দিল। সেইদিনই সলিল সমাধি হয়ে যেত দুজনের যদি না রাশিয়ান বর্ডার পুলিশ তাদের উদ্ধার করত। জানতে ইচ্ছা করছে ওই যুবকটি কে !!! ... তিনি হলেন জর্জ গ্যামো। যার সন্মধে লিখতে বসলে একটা গোটা উপন্যাস লেখা যায়।
George Antonovich Gamow বা সংক্ষেপে জর্জ গ্যামো একজন রাশিয়ান-আমেরিকান পদার্থবিদ। জর্জ গ্যামোর মতন কাজের ব্যাপ্তি খুব কম পদর্থবিদেরই আছে। B.Sc তে আমাদের সকলের পড়া liquid drop model থেকে সুরু করে Big Bang Theory বা cosmology তে তাঁর বিরাট অবদান। অনু পরমাণুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুনিয়া থেকে শুরু করে অসীম অনন্ত মহাকাশের অজানা দুনিয়ায় তাঁর অবাধ বিচরণ। Alpha Decay কিংবা Gamow-Teller Transition আবিষ্কার না হলে আজকের ফিজিক্স আজকের জায়গায় পৌঁছাতে পারতো কিনা সেটা গবেষণার বিষয়।
Schrödinger এর মতন জর্জ গ্যামো ও জীববিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ওয়াটসন ও ক্রিকের ডি.এন.এ র ডাবল হেলিক্স গঠন আবিষ্কারের মাস দুয়েক পরেই তিনি শুধুমাত্র পারমুটেশন-কম্বিনেশন থিওরির সাহায্যে ভবিষ্যৎবাণী করেন যে প্রোটিনের গঠনমূলক একক অ্যমাইনো অ্যসিড গঠনের জন্য কমপক্ষে তিনটি ডি.এন.এ বেস ( A, T, G, C ) লাগবেই। তার এই ভবিষ্যৎবাণী জীববিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত।
জর্জ গ্যামো যদি পদার্থবিদ হিসাবে বিখ্যাত নাও হতেন তবুও পৃথিবীর মানুষ তাকে মনে রাখত তার বিখ্যাত বইগুলোর জন্য। One-Two-Three infinity সম্ভবত সকল বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষেরই পড়া। The Birth and Death of Sun কিংবা Thirty Years That Shook Physics বইগুলি অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়ে গেছে।
এ সবের পাশাপাশি গ্যামো ছিলেন অত্যন্ত রসিক মানুষ । Neutron captured theory জার্নালে প্রকাশ করার সময় Alpher এবং নিজের নামের পাশাপাশি হ্যান্স বেথের নামও যুক্ত করে দেন। যদিও বেথে আদেও এই পেপারটা লিখতে কোনো ভূমিকা রাখেন নি। গ্যামো কে যখন পরে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি বলেন গ্রীক শব্দ আলফা-বিটা-গামা র সঙ্গে সাদৃশ্য রাখতে তিনি এই কাজ করেছেন। আলফা মানে Alpher, বিটা মানে বেথে, আর গামা মানে গ্যামো। বোঝো কান্ড !! আপনি কি কখনো আপনার বন্ধুর নাম দেবেন শুধু নাম মেলানোর জন্য ? আজও পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে এই পেপারটা বিখ্যাত হয়ে আছে আলফা-বিটা-গামা পেপার নামে !!
বুঝতে পারছেন তো , কেন বলেছিলাম জর্জ গ্যামো কে বর্ণনা করা তাবড় সাহিত্যিকদের পক্ষেও কঠিন কাজ !! সকলে যেমন E=Mc^2 এর মতন থিওরি দিতে পারেন না তেমনি এত ক্ষুদ্র বর্ণনা করে এই মহান বিজ্ঞানীকে বোঝানো যায় না।।।
লেখায়: চিন্ময় বিশ্বাস।

Comments

Popular Posts